পশ্চাত্‍ জানালা ও কিছু অঙ্গুলীয় (digital) ভাবনা

গতকাল একটা সিনেমা দেখলাম – “Rear Window”। এটা যারা দেখেছেন তাদের জন্যই এই লেখা, যারা দেখেননি তাদের জন্য নয়।

সিনেমাটা দেখার (যদিও মাঝে কিছুক্ষনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম) পর আমার প্রথম যে শব্দটা মনে পড়েছে তা হল “Obviousness”। একটা সিনেমা দেখে প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই যদি এর ঘটনা বুঝে যাওয়া যায় তাহলে বাকিটা সময় ঘুমান ছাড়া আর কী করার থাকতে পারে? অনেক মুভিতে দেখা যায় যে প্রথমে যে ইম্প্রেশনটা হচ্ছে সেটা হয়তো কোনও কারনে অভাবনীয়ভাবে বদলে যাচ্ছে। এই অভাবনীয় বদল হয়তো একটা আকর্ষণ তৈরি করতে পারে। কিন্তু যে সিনেমার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার মন কোনভাবেই প্রথম ধারনাটা থেকে বদলালোনা, সেই মুভিটাকে কিধরনের মুভি বলা যায়?

কিছু কিছু গল্প আছে যেগুলো পাঠককে কোনও ঘটনা বিশ্বাস করাতে চায়। এসব গল্পের প্রধান 2টা বৈশিষ্ট্য থাকা চাই। প্রথমত, যে ঘটনাটা বিশ্বাস করাতে চাইছে, সেটার স্বপক্ষ্যে কিছু যুক্তিপ্রমান। দ্বিতীয়ত, গল্পের বিভিন্ন স্তরে যে প্রশ্নগুলো তৈরি হয়েছে তার জবাব। “rear window” প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছে পিছনের জানলার দর্শককে খুন করতে চাইবার প্রয়াস। কিন্তু বিভিন্ন স্তরের প্রশ্নগুলোর কোনও জবাব কিন্তু মিললো না। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়

  1. লোকটা লাশটাকে আসলে কী করেছিল? বাগানে পুতে ফেলেছিল? সেক্ষেত্রে ওই জায়গাটা যখন খোড়া হলো তখন কিছু পাওয়া গেল না কেন? এটা নিশ্চয়ই সম্ভব না কারন বৃষ্টিভেজা রাতে লাশ বের করলে পিছনের জানালার দর্শক সেটা দেখতে পেতো। লাশটা কী পোস্ট করে দেয়া হয়েছিল? যেখানে পোস্ট করা হলো তারা সেটা নিয়েই বা কী করেছে?
  2. গহনাগাটি নিয়ে যে লং ডিসট্যান্স কল করা হলো সেটাই বা কার সাথে?
  3. ট্রেনে লোকটার সাথে যে মেয়েটা ছিল সে আসলে কে ছিল?
  4. এত সাঙ্গপাঙ্গ (বউ না এমন মেয়ে, অত্যন্ত দূরবর্তী কোনও জায়গার সাহায্যকারী etc) নিয়ে এই রকম একটা খুন কিভাবে করল? সাঙ্গ-পাঙ্গরা কী স্বতষ্ফুর্তভাবে তাকে সাহায্য করলো নাকি তাদেরও কোনও মোটিফ ছিলো?
  5. খুনী লোকটা যখন টের পেলো যে তার কর্ম কান্ড ধরা পড়ে গেছে তখন সে আগের মত গুছিয়ে প্লান করে খুনের পরিকল্পনা না করে প্রকাশ্য দিবালোকে মারতে গেল কেনো? তাও আবার জানালা দিয়ে ফেলে মারার চেষ্টা — যেটা করলে সবাই দেখতে পাবে

সবকিছু চিন্তা করলে মনে হয় প্রশ্নের সংখ্যা উত্তরের থেকে ঢের বেশি হবে। হয়ত কোনও কোনও উত্তর কল্পনা করে নেয়া যায় কিন্তু সরাসরি এসব কোনও প্রশ্নের উত্তরই এই মুভিতে নেই। যাই হোক, আমার এসব লেখার উদ্দেশ্য এই সিনেমাটা খারাপ সেটা প্রমাণ করা না। statistical evidence যে অনেক ক্ষেত্রেই misleading হতে পারে সেটার একটা উদাহরণ দেয়া। এই সিনেমার এক দর্শক আমাকে বলেছিলেন যে এটা বলা উচিত্‍ না যে সিনেমাটা খারাপ। বলা উচিত্‍ যে এটা আমার কাছে ভাল লাগেনি। তার কারণ হিসেবে উনি যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন যে অনেক মানুষ এটাকে ভাল বলেছে। IMDB অনুযায়ী এটার রেটিং ১০ এ ৮.৭ কিন্তু এর অর্থ কী এই যে অধিকাংশ মানুষ মনে করে যে সিনেমাটা খুব ভালো? আমার একটু সন্দেহ আছে।

একটা শিল্পকর্ম ভালো না খারাপ এটা পুরোপুরিই নির্ভর করে কার সাথে তুলনা করা হচ্ছে তার উপর। ১৯৯৫ সালে যখন আমি Macgyver দেখি তখন আমার কাছে এটাকে একটা অনন্যসাধারণ সিরিয়াল মনে হতো। আমার ধারনা এই মনে হবার কারণ হল ওই সময় এধরনের বৈজ্ঞানিক চিন্তাসম্বলিত সিরিয়াল দুর্লভ ছিল। তখনকার সেই ভালো লাগার অনুভুতিটা আমার মনে পাকাপাকিভাবে গেঁথে গেছে। এখন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে macgyver কেমন সিরিয়াল অবশ্যই আমি ধনাত্তক জবাব দেব। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে কেউ যদি আজকে macgyver দেখা শুরু করে তাহলে তার এটা ভালো লাগবে। আজকে যে দেখবে তার কাছে তুলনা করার মত অনেক ভালো উদাহরণ রয়েছে যার কাছে হয়ত macgyver ধোপে টিকবে না। কাজেই মুভির reviewer মুভিটা কতো সালে দেখেছে এটা একটা বড় বিবেচনার বিষয় যেটা রেটিং সিষ্টেমে বিবেচনা করা হয় না।

“rear window” হয়ত ভাল মুভি কিন্তু কালোত্তীর্ণ ভাল মুভি না।